কলেজস্ট্রিট থেকে – পর্ব ২

কলেজস্ট্রিটে বেস্ট সেলার কে? ফুটপাতের বই-গুমটিগুলো; কলকাতার হেরিটেজ তাদের কাছে জানতে চান! তারা এককথায়  সহায়িকা-প্রকাশনীদের নামজাদা সম্পাদক, সম্পাদকমন্ডলীর কথা বলবে। কলেজস্ট্রিটের মূল ব্যবসাটা আসে ওখান থেকেই। সাধারণ মানুষের কাছে কলেজস্ট্রিটে বই কেনা-বেচার বাজার। সে বাজারের বেস্ট সেলারের আসল খেতাব ঐ পাঠ্য আর রেফারেন্স বইয়ের লেখককুলেরই দখলে। কিন্তু খবরের কাগজে, আজকাল সামাজিক মাধ্যমে যে কতপ্রকার বেস্ট-সেলারদের নাম ছাপা হয় তাদের গল্পটা আসলে কী? সে গল্পটা মোটেও পাঠ্য বইয়ের নয়। সাহিত্য ও অন্যান্য বিদ্যাচর্চার নতুন যেসব বই প্রকাশকেরা ছাপছেন তাদের নিয়েই জমে ওঠে ‘বেস্ট সেলার’দের সোপ অপেরা। এই সোপের টি আর পি বাড়ে কমে। লেখক আর তার বই মই বেয়ে ওঠে আবার সাপের পেটেও যায়।  

একে সোপ অপেরা তার ওপর আমাদের বড় আদরের টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়াও বেশি দূরে নয় তাই প্রচুর চরিত্রের ভিড় এই নাটকে। কিন্তু ফুটপাতের সেইসব ফেরিওয়ালা যারা নতুন এবং সস্তার বাংলা বই বিক্রি করে এম জি রোডে, সূর্য সেন স্ট্রিটে আর কলেজস্ট্রিটে । তাদের বই বিক্রির তথ্য; ‘বেস্ট সেলার’ গণিতে আসে না। যদি কেউ সত্যি সত্যি নতুন বাংলা বইয়ের ‘বেস্ট সেলার’ খুঁজতে যান। তবে যেতে হবে এই বই-হকারদের কাছে, যেতে হবে জেলা বইমেলায়;  ঘুরতে হবে কলকাতা বইমেলার ছোট ছোট স্টলে এবং অবশ্যই গেটের বাইরের ঐ বই-ফেরিওয়ালাদের কাছে। রঙচঙে মলাটের নতুন কাগজের গন্ধওয়ালা বই ধরে ধরে তারা দেখিয়ে দেবেন। ওদের পেট চালাচ্ছে ধম্মের বই, রান্নার বই, চাষবাষের বই আর রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্রের বই। একটু দাঁড়িয়ে থাকলে দু-পাঁচজন খদ্দেরও দেখা যাবে। দরদাম শেষে বড় আয়তনের একটা সঞ্চয়িতা বা ছোট আকারের সঞ্চিতা বগলদাবা করে  চোরাপকেট থেকে টাকা নিয়ে গুণে গুণে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন দোকানদারের। 

পড়ে, পাতি পাবলিক বাঙালি বই পড়ে। এই এখনও। গায়ে খাটা পয়সা দিয়ে কিনেই পড়ে। নিজেদের ইচ্ছেমত বই পড়ে। কিন্তু বেস্ট সেলারের ঘানিগাছে তাদের সেই ইচ্ছে জায়গা পায় না। কথায় কথায় আদ্দিকালের তিনজনের নাম এসে পড়ল। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র। শরৎবাবুকে বাদ দিয়ে রবি ঠাকুর আর তার প্রিয় নজরুলের কথায় এবার আসা যাক। রবি ঠাকুরের তাও গল্পগুচ্ছ, উপন্যাসসমগ্র আছে কিন্তু নজরুলের তো নব্বইভাগ কবিতার বই। এই ভয়ঙ্কর ইনফ্লেশন-জিডিপির আকালেও নজরুলের কবিতাই লোকে কেনে। রবি ঠাকুরেরও কবিতার বই কেনে। কেন, কেনে তারা? বাংলাভাষায় তারপরে তো কম কবি আসেননি! তাদের অনেকেই দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছেন বা দিতেই পারতেন। তবু নজরুল আর রবীন্দ্রনাথ। কী ছিল তাদের কায়দা? কীভাবে তারা আবহমান বাঙালির মনের গোপন জায়গা ছুঁয়ে ফেলছেন…এই এখনও। সেসব প্রশ্ন তোলা থাকল কলেজস্ট্রিটের এলিট চিন্তাজীবীদের জন্য। আমরা শুধু দেখি। অবাক হই। নজরুলের কলমের ক্ষমতায়। দেখি, সঠিক কলমে ভর করলে কবিতা এলিট থেকে প্রোলেটারিয়েট সকলকে কীভাবে কাবু করে দিতে পারে!

কবিতার কী অমিত শক্তি! তাই কি,  এই দুই কবি রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল বাঙালীর সাহিত্য থেকে উঠে এসে জাতীয় জীবনে জড়িয়ে পড়েন? জাতির আইকন হয়ে ওঠেন। যাদের মাতৃভাষা বাংলা তাদের বিপদে, বিদ্রোহে, বিপ্লবে লাইটহাউস হয়ে উঠেছেন? আর সেইজন্যই এই দুই কবি আর, তাদের কবিতা বারবার অপমানিত, নির্বাসিত হয়েছে। সে ইতিহাস সবাই জানে। কিন্তু ইতিহাস তো শুধুই স্কুলে পড়ে নাম্বার পাওয়ার বিষয়! স্কুল-কলেজ পেরোলে তাকে আর কী দরকার! তার কাছে আর আমরা যাই না, নতুন করে কিছু শেখাও হয় না। সেই সু্যোগে  ইতিহাসই বারবার আমাদের কান মলে দেওয়ার সুযোগ পায়। আমরা নির্লিপ্ত চোখমুখে কান ডলতে ডলতে  শুধু মুসলমান হওয়ার কারণে এই দু’হাজার তেইশে প্রগতিশীল পশ্চিমবাংলায় নজরুলের ছবি সরিয়ে, ফ্লেক্স পালটে ‘রবীন্দ্র-নজরুল স্মরণ সন্ধ্যা’কে রবীন্দ্র স্মরণে কবিপ্রণামের জলসা বানাই। সামাজিক মাধ্যমে একটু হইচই হয়, কিছু প্রতিবাদী পোস্ট ভাইরাল হয়, নজরুল -পেটেন্ট লেখকের ফলোয়ার বাড়ে। আমাদের ঘুমের মোটেও ব্যাঘাত হয় না। আমরা জানি, বড় লেখকদের নিয়ে বিতর্ক-টিতর্ক স্বাভাবিক। হয়, লোকে ভুলে যায়, মিটেও যায়। তবুও…হ্যাঁ তবুও কিছু অকাজের লোক থাকে তারা খই ভাঁজতে খুব ভালবাসে!

ইদানিং বইবাজারে রেট্রো, ট্রাডিশন, ভয়ানক রস, বীভৎস রস লোকে জব্বর খাচ্ছে। খই খাওয়ানোর চেষ্টা করলেই বা ক্ষতি কোথায়? খই-এর অনেক গুণ। পেট পরিস্কার করে। তবেই মাথাটা খোলে। এই কলমচির যদিও মাথাটা নিরেট। সে কিছুতেই বুঝতে পারে না। রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করতে গেলেই কেন নজরুলকে জড়িয়ে নিতে হবে?  কেন, শুধু নজরুল স্মরণের অনুষ্ঠাণ করা যায় না? সরকারি আয়োজনের ব্যতিক্রমী উদাহরণ, ব্যতিক্রমই থাকুক। পাড়ায়, গ্রামে, গঞ্জে, মফস্বলে এমনকি এই শহরেও গ্রীষ্মের শুরু থেকেই রবীন্দ্র-নজরুল স্মরণের ঢল শুরু হয়। খই না কিনে পাঠক বলতেই পারেন, ‘কেন বাবা, দুজনকে একসাথে ডাকলে অসুবিধা কোথায়?’ না কিছুই অসুবিধা নেই! তবে কিনা, কয়েক দশক আগে  আমাদের ছেলেবেলায়, এই আয়োজনগুলোকে বলতাম…রসুন সন্ধ্যা। রসুন, মানে রবীন্দ্রনাথ-সুকান্ত-নজরুল; তিন কবিকে স্মরণের আসর। আমরা ছোট থেকে বড় হয়ে বুড়ো হয়ে গেলাম। বেচারা সুকান্ত সেটা করতে পারলেন না বলে তিনি বাদ পড়লেন। 

এখন রবীন্দ্র-নজরুল সন্ধ্যা। বাঙালি ট্রাডিশনাল জাত। এবার কী তাহলে নজরুলের পালা? তিনি কি এবার বিদায়ের পথে? তারই কি প্রথম উদাহরণটার সাক্ষ্মী হয়ে থাকলাম আমরা? তা হোক, বিবর্তনের পথে টিকে না থাকলে নজরুল যাবেন, আমরা আর কী করতে পারি! কিন্তু রবীন্দ্রনাথ? দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা? তার কী হবে? তিনিও কি একদিন…? প্রশ্ন উঠতেই পারে, ওঠেও। সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের বদলে ভবিষ্যৎ এসে পড়ে। একই কায়দায়  কলমচির কষে কান মলে; কেন বাবা এই যে বললে দুই কবির বই ‘গায়েগতরে’ মানুষগুলো নাকি খুব কিনছে, তাহলে কীসের বিপদ?

তারা সব গায়েগতরে বটেই কিন্তু তাদের মাথার দায়িত্ব যে কলেজসট্রিট নিয়ে নিয়েছে! সেই মাথা  ভাবতেই পারে; ঐ দুই পরমবৃদ্ধ কবির বই ছাপলে …নাফা বড্ড কম! উলটে নাফার যন্তরটাও উলটে যেতে পারে। আর বুড়োদুটো কি কম কুচুটে!  একজন নবীনদের বলে;  আধমরা বুড়োধুরোর দলকে ঘা মেরে পগারপার করাতে, অন্যজন তো নওজওয়ানদের দিয়ে ক্যু করিয়েই ছাড়বে। এমন বিপজ্জনকদের নিয়ে চিন্তা হবে না?  কলেজস্ট্রিটের মাথাদের সামনে এমনই অসংখ্য বিপদ…দুই স্যাঙাৎ মনে করলে এখনও কয়েক হাজার লক্ষ ডিভিশন সৈন্যেকে হারিয়ে দিতে পারে! পদ্মার ওপারে তো তার চাক্ষুষ প্রমাণ রয়েইছে! কিন্তু এই চিন্তার স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার যুগে ইউরো-ডলার মামাদের বদান্যতা বজায় রাখতে গেলে  বই ছাপানো, বই বিক্কিরি বন্ধ করতে গেলেও তো বিপদ! নিষেধাজ্ঞা নেমে আসতে পারে। তাহলে এই দুই বুড়োর কবল থেকে নিরাপদ আর নিশ্চিত মুক্তির উপায়টা কী? 

লেখক-কবি জাতটাকে নিয়ে কী যে বিপদ! ব্যাটারা সবকটাই এক ধাঁচের হয় না! মালা, চেয়ার, পানীয়, রসিকাতে সবাই কেনা যায় না! কখন যে কোন দিক থেকে ঠেলে ওঠে! ওপারের মুক্তি আন্দোলন তো দৃষ্টান্ত। সারাপৃথিবীতেই এমন অজস্র ঘটনা ঘটেছে, ঘটছে, ঘটবে! মলোয়েজ, লোরকা, মায়াকোভস্কিরা আছেন। আছেন এলিজাবেথ ব্যারেট ব্রাউনিং কিংবা ডাব্লু এইচ অডেনরাও যারা রক্ষণশীল বিলেতি মগজে হানা দিয়ে ঝুটঝামেলা পাকিয়ে তুলতে পারেন। তাহলে? দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকার মত নিরন্ন, ধর্মভীরু আর আবেগপ্রবণদের দেশে সেরা কায়দা কী হবে? 

কেন? ভাগ কর, ভাগ করে দাও। ধর্মের নামে, জাতের নামে, আরও যতরকম স্থানীয় পরিচয় আছে তাই ধরে ধরে ভাগ করে দাও। তাহলে যতই গরীব-গুর্বোদের মনের গোড়ায় কবি-লেখকদের চেতনা যতই পৌছে যাক না, আবার সেসব ইরেজার দিয়ে মুছে দেওয়া যাবে। যে লোকটা লিখেছিল…জাতের নামে বজ্জাতি সব, জাত জালিয়াত খেলছ জুয়া! সেই লোকটাই হয়ে যায় মুসলমান, নেড়ে কবি। 

বেমক্কা প্রশ্ন ওঠে; বাবা এত ইতিহাস ভবিষ্যতের নাগরদোলায় চড়াচ্ছ। তাহলে বল, বুড়োদাদু রবি ঠাকুরকে বাদ দিয়ে একা নজরুল কেন জাতীয় কবি? দুজন জাতীয় কবি কি হয় না?  সংকটের কঠিণ সময়ে কঠিণ প্রশ্ন। আবেগে সুড়সুড়ি দেওয়া প্রশ্ন। সুড়সুড়ির শেষ নেই। এই সুড়সুড়ির আক্রমণেই কি রবীন্দ্রনাথের হিন্দু আর নজরুলের মুসলমান পরিচয় বড় হয়ে উঠছে চায়ের দোকানে, সমাজ মাধ্যমে, ট্রেনে-বাসের আলোচনায়? অবাক হই না আমরা, এ তো আমাদের জাতির পরিচয়! উদ্বাস্তু হয়ে আসা কলোনিতেও জেলায় জেলায় কলহ, কোঁদল, মারামারি একসময় রুটিন ছিল। এপারেও শিক্ষিত বাঙালির মধ্যে জেলা নিয়ে অভিমান কম নেই! নিজেকে বা অন্য কাউকে বাঙালি বলার আগে মেদিনিপুরিয়া, বর্ধমানের লোক, কলকাতার লোক বলে গর্ব বা তাচ্ছিল্য করার প্রবণতাকে কী অস্বীকার করা যায়! ধর্ম, জাতপাত, গ্রাম-শহর-জেলা এইসবকিছু নিয়েই তাই আজকাল ভাগ আর ভাগ। এই ভাগের ক্যাপসুলটাই যে সেরা ক্যাপসুল! 

লেখালেখির জগত দিব্যি খেয়ে বসে আছে সেই ক্যাপসুল। ইনি এই ধর্মের লেখক তো উনি ঐ জাতের তো উনি নীপিড়িত জাতির তো উনি নারী বা পুরুষবাদী! লেখকের কত যে তকমা ! সে তকমা বানানোর প্রতিষ্ঠাণেরও কমতি নেই! একেবারে সম্প্রদায়ের ভেতর থেকে কাজ করে যারা বঞ্চিত, নিপীড়িত তাদের দিয়ে লেখানোর প্রয়াস চলছে! সাধু উদ্যাগ। কিন্তু মৌলিক লেখা কি যান্ত্রিক পদ্ধতিতে উৎপাদন করা যায়? অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে অদ্বৈত মল্লবর্মন এসেছেন। তিনি কোন প্রজেক্টের প্রোডাক্ট? শরৎবাবু যখন অভাগীর স্বর্গ লেখেন তখন কি অভাগীদের ওপর যে জটিল অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক শোষণ চলে তার সঠিক প্রতিফলন হয়নি?

লেখক-শিল্পীরা এক অলৌকিক সৃষ্টির চেতনা এবং মেধা নিয়ে জন্মান। তিনি যে সমাজে বা সম্প্রদায়েই থাকুন না কেন, তাঁর সৃষ্টির কাজ চলতে থাকে। সুযোগ পেলে লালন শাহ, গগন হরকরাদের মত তাঁর নাম সবাই জানতে পারে নাহলে লোকসাহিত্যের ধারায় তিনি মিশে যান। এখন এই প্রচার আর পুরস্কারের যুগে নানাভাগে বিভক্ত সমাজে আলাদা সাহিত্য, মানদন্ডের নিরিখে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে, লেখক তৈরি হচ্ছে, সম্প্রদায়ের হাল তিনি বদলে দেবেন, অত্যাচারের বদলা নেবেন। কিন্তু  রাজনীতি আর সমাজনীতির এই কাজ কি প্রজেক্ট-কারখানার যুগের আগে লেখকদের লেখায় আসেনি? সেখানে কি প্রান্তিক চরিত্ররা লেখকের সহানুভূতি, সমানুভূতি পায়নি? অসংখ্য মণিমুক্তা আমাদের বাংলা সাহিত্যে ছড়িয়ে রয়েছে। জায়গার অভাব তবুও ওয়ালিউল্লাহ’র একটি তুলসীগাছের কাহিনী, সতীনাথের ঢোঢ়াই চরিত-মানসের নাম জিভের ডগায় চলে আসে। 

তাহলে কোনকিছুরই কি প্রয়োজন নেই? কীভাবে প্রান্তিক সমাজের লেখকেরা হারিয়ে যাবেন না? কোটি কোটি পাঠকের কাছে তারা পৌঁছোবেন কীভাবে? তার জন্য প্রয়োজন সারা দেশ, রাজ্য জুড়ে সুস্থ গণতান্ত্রিক শিক্ষার ব্যবস্থা। যার পাঠক্রমে সমাজ সভ্যতার সব দিক প্রতিফলিত হবে। সাহিত্য এবং মাতৃভাষা হবে যার প্রধান দুটো বাহন। এই সমাজের সব থেকে প্রান্তিক মানুষটিও বুঝবে তার প্রথম পরিচয় মানুষ, দ্বিতীয়ত সে এই দেশের নাগরিক। একজন দেশবাসী হিসাবে সে মানুষের পরিবারের সদস্য। সে নিজের ভাষা, সংস্কৃতির চর্চা খোলা মনে করতে পারবে। কোন কারখানার সিডিউল তাকে জানিয়ে দেবে না, তোমাকে লেখক হতে হবে এবং নিজের সীমিত পরিচয়কে সেই লেখায় বড় করে তুলতে হবে। ভাগ করার কোন খেলায় সে ফুটবল হবে না। যে খেলার সব মুনাফা, নাফা বহু বহু দূরের ডিজিটাল অ্যাকাউন্টে জমা হয়।

‘ভুল হয়ে গেছে বিলকুল/ আর সবকিছু ভাগ হয়ে গেছে/ ভাগ হয়নি তো নজরুল’ …. যন্ত্রণা, কষ্ট অনেক। ভাগ হয়ে গেছেন নজরুলও। কলেজস্ট্রিটের পড়ুয়া, ক্রেতা, বুকের পাঁজর জ্বালানো লেখকদের এটাই অব্যক্ত ব্যাথা। ভাগকরার স্রোত দিনদিন বন্যা হয়ে উঠছে। বাঁধ দেওয়ার চেষ্টাটুকু দেখা যাচ্ছে না! তবুও এই ৩৬ কলেজ স্ট্রিট ছিল ধুমকেতুর সম্পাদকের কর্মভূমি এবং রণভূমি।কলেজস্ট্রিট, প্রতাপ চ্যাটার্জী লেন, নজরুলের ব্রিটিশ বিরোধী, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ের সাক্ষ্মী। রবিবারের দগ্ধ দুপুরে শুনশান কলেজস্ট্রিট, সূর্য সেন স্ট্রিট, হ্যারিসন রোড, প্রতাপ চ্যাটার্জী লেনের পিচ গলে। ভাপ ওঠে। উষ্ণ বাস্প কানে কানে বলে যায়; আছে নজরুল আছে। প্রবলভাবেই আছে। ভাগাভাগি জেতে না, জিততে পারে না, জিতবে না!  অসম্ভব একটা প্রত্যয় জন্ম নেয়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, সে প্রত্যয় গাঢ় হয়। সঞ্চিতা আর সঞ্চয়িতা কেনা মুখগুলোর হাসি ছড়িয়ে পড়ে সারা বইপাড়ায়। কলেজস্ট্রিট থেকে আজ এই পর্যন্ত।

রাজেশ ধর : কথাশিল্পী, কলকাতা, ভারত।

আরও পড়ুন – কলেজস্টিট থেকে