শহরে ভরা বর্ষা। কলেজস্ট্রিটেও বৃষ্টি। জল জমছে, জল নামছে। এ শহরই শুধু না পুরো উপমহাদেশ জুড়েই বর্ষণ, বন্যা। বন্যার জল আর পলিতে গড়ে উঠেছে নদীমাতৃক এই বিশাল ভূভাগ। তাতেই তার সমৃদ্ধি। যুগ যুগ ধরে জল আর বন্যার সাথে যুদ্ধ আর মিতালি করতে করতে তাকে নিজেদের বন্ধু বানিয়ে নিয়েছিল এই উপমহাদেশের মানুষ। কিন্তু তাল কাটল পশ্চিমী প্রযুক্তির আগমনে। বন্যাকে দমানোর জন্য শুরু হল নদীগুলোর বুকে বড় বড় বাঁধ আর দুপাশে পাড়-বাঁধ। তাতে কী আর বন্যাকে আটকানো যায়!
মৌসুমী বায়ুর এই দেশে অকুল-বর্ষণে আজকাল বন্যা আরও দামাল হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নদীর খাতে পলি জমে থাকে, দুপাড়ের বাঁধানো তীরভূমিও অনেক উচু তাই ঝমঝম বর্ষার জল এগোতে পারে না দুপাড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে না। তীব্র আক্রোশে বাঁধ ভেঙে এগিয়ে যায় বন্যা-বর্ষা-নদী। এত বরাদ্দ, এত পরিকল্পনা, এত প্রযুক্তি-প্রশাসন, রড-সিমেন্ট-বালি, প্রতিরোধ-প্রতিবাদ-আন্দোলন সব মিথ্যে হয়ে যাচ্ছে বন্যার ছেলেখেলার কাছে। যত দিন যাচ্ছে জুন থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর আরও আরও চোখের জলের ধারাপাত। পাঠক ভাবছেন সেই আবার, শিবের গীত শুরু হল ! কী করা যায়! জলের কথায়, কথার মালা। বন্যার জলের মতই সামনে যা পায় তাকে ডুবিয়ে, ভাসিয়ে বয়ে চলে জলকথামালা। কারুর নির্দেশ কি সে মানে?
তবে এ বর্ষায় শুধু মাটিতে, নদীতেই বন্যা আসেনি আমাদের চোখে, বুকের ভেতরেও জল ঝরছে। সেখানেও বন্যা। আকাশ থেকে নেমে আসা জলের সাথে তার ফারাক শুধুই স্বাদে। বড্ড নোনতা। কলেজস্ট্রিটে এখন ঐ দুই বন্যার ধারাপাত। মোদ্দা কথা কলেজস্ট্রিটের বড্ড মন খারাপ। মানুষের সভ্যতায় মারামারি, কাটাকাটি বরাবর চলছে তবুও মোটামুটি একটা শান্ত সমাজে আমরা থাকি যেখানে আইনের শাসন চলে। তাসত্ত্বেও হঠাৎ হঠাৎ… নৃশংস খুনোখুনি শুরু হয়ে যায় । যাদের সহ্য করতে পারা যায় না, যারা শত্রু বলে চিহ্নিত হয়ে যায় তাদেরকে বিশেষ করে তাদের মেয়েদের শরীর, মন, সবটুকু অস্তিত্ব দুমড়েমুচড়ে ধুলো করার খেলা চলে। এমনটা যদি হয় তাহলে কলেজস্ট্রিটের কলমবাজ কিম্বা আঙুলবাজ (আজকাল ল্যাপটপেই বেশিরভাগ লেখকই তো লেখেন)কবি-লেখকদের নরম মন আর সংবেদী চোখ থেকে নোনা জল না ঝরে থাকতে পারে! তাই এ বর্ষা রোমান্টিক বর্ষা নয়।
আরও পড়ুন – কলেজস্ট্রিট থেকে – পর্ব ২
খবর আসে, বড় বাড়ির আর বিনি-পয়সার বাজারের পুজোসংখ্যাবিষয়ক ডিমান্ডসাপ্লাই-এর গল্পের মধ্যেও মাঝেমাঝেই লেখকদের হাত নাকি মুঠো হয়ে উঠছে। ঐ মুঠো গিয়ে কারুর পিঠে পড়বে নাকি শিথিল হয়ে বাজারের ব্যাগ ধরবে সেকথা নাহয় ভবিষ্যতই বলুক। আমরা বরং ভেবে দেখি কলেজস্ট্রিটের লেখকদের দুনিয়ায়, লেখালেখির দুনিয়ায় এই কাটাকাটি, মারামারি চলে কি? না… কস্মিনকালেও এই কলমচি হাত গুটিয়ে এক লেখককে অন্য লেখকের সাথে মারামারি করতে দেখেনি। আর করবেই বা কী করে! কথাতেই আছে আমাদের লেখকরা সব দুর্বল হৃদয়ের মানুষ। রক্তে ভরপুর অক্সিজেন ভরে না নিতে পারলে কি যুদ্ধে কিম্বা খেলায় মেতে ওঠা যায় কি? সত্যি, বাস্তবে তেমন কিছুই দেখিনি।
তবে একথা অবশ্যই বলা যায়। সুদূর কলম্বিয়া থেকে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া নামের এক ভদ্রলোক যদি কলেজস্ট্রিটে এসে পড়তেন তাহলে এব্যাপারে বেশকিছু জাদুবাস্তব কুড়িয়ে নিয়ে যেতে পারতেন।
যেমন—১। কোনো লেখককে পছন্দ না হলে, তার অন্যরকমের কিছু বন্ধু-সম্পাদকেরা যাতে ঐ লেখকের লেখা কোথাও ছাপা না হয় সেই এজেন্ডা নিয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন । আবার—
২। একজন কবি বা লেখক নিবিষ্ট মনে চেষ্টা করছেন বিষয়ে বা ভাষায় নিজস্বতার একটা জগৎ গড়ে তুলবেন ব্যাস সেইসকল বন্ধু-সম্পাদকের দল তাকে দাগিয়ে দেবে…ব্যাটা বড্ড স্টান্টবাজ, কিছুতেই ওর লেখা কোথাও ছাপা যাবে না। গার্সিয়া সাহেব বাংলা পড়তে পারতেন কিনা জানা নেই কিন্তু পাঠকের হয়ত এই প্রসঙ্গে জীবনানন্দের নাকাল হওয়ার কথা মনে পড়তে পারে। কিন্তু জীবনানন্দের প্রকৃত বন্ধুর সংখ্যা কম ছিল না, বুদ্ধদেব বসু তো ছিলেনই, তার সাথে প্রেমেনবাবু কিম্বা তরুন সঞ্জয়রা অনেকেই ছিলেন। গার্সিয়া কলেজস্ট্রিটে খুঁজে পেতে পারেন এমন প্রচুর লেখক-কবিকে যারা বন্ধুলেখক-বন্ধু সম্পাদকদের জন্য লজ্জায়, অপমানে হারিয়ে গেছেন। আরও আছে—
৩। লেখালেখির শুরুতে সকলেই চায় বড় লেখকদের প্রশংসা পেতে। আজকের কলেজস্ট্রিটের জাদুবাস্তবে গ্যাব্রিয়েল সাহেব নিশ্চই ‘বড়’ মানে বুঝে নেবেন ; ধারে ও ভারে মিডিয়ায় ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলিব্রিটি লেখক; লেখার মান বা বইবিক্রির সংখ্যার বাস্তব দেখলে মোটেও চলবে না। তো এমন ‘বড়” লেখকের প্রশংসা পেলে সেই নতুন লেখক যেমন উৎসাহ পায় তেমনই লেখক হিসাবে তার পরিচিতি বাড়ে। কিন্তু মজাটা এখানেই যেই একজন কোনো ‘বড়’ লেখকের সাথে তিনি পরিচিত হলেন সঙ্গে সঙ্গে কলেজস্ট্রিটে নিজের অজান্তেই সেই ‘বড়’ লেখকের লবির লোক হয়ে গেলেন। আর কী! তারপরে ঐ লবির বাইরের অন্য ‘বড়’ বা ছোট কোন লেখকদের সাথে তিনি সৌজন্য-সাক্ষাৎ পর্যন্ত করতে পারবেন না। লেখালেখি নিয়ে আড্ডা মারার তো কোন প্রশ্নই নেই। অবশ্য অন্য ‘বড়’ লেখকেরাও বাইরের লবির লেখকের সাথে দেখা করবেন কিনা সেটাও একটা চর্চার বিষয়! ব্যাপারটা এখানে মিটলে ভালই হত।
কিন্তু বন্যার জল, বর্ষার জল ঢাল বেয়ে নীচে নেমে যায়। কলেজস্ট্রিটের জমা জল, কর্পোরেশনের পাম্পের টানে পাতাল-নিকাশীতে হারিয়ে যায়। আর এইসব ঘটনা জাদুবাস্তবের ডানায় ভর করে উড়তে থাকে। এই নবাগত লেখকটিকে কত যে লবি নিজেদের বিরোধী বানিয়ে ফেলবে, একমাত্র ক্যালকুলেটরের পক্ষেই তা বের করা সম্ভব। বহমানতার জন্য আজকাল ‘বিরোধী’ আর ‘শত্রু’ সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছে। তো, বিরোধী লবিরা এবার নবাগত কবি-লেখকটিকে দক্ষিণে হিন্দ সিনেমা আরক উত্তরে সিমলে পাড়ার ওপারে পাঠানোয় খেলার লেগে পড়বে। এবার, আমাদের নায়ক লেখকটি যদি জন্মগত রণপ্রতিভা নিয়ে কলেজস্ট্রিটে আসে আর খেলতে খেলতে টিকে যেতে পারে তাহলে অন্য পক্ষরা একদিন ‘আর খেলা হবে না’ বলে পালাবে নাহলে… সেই পলায়নের আরেক জাদুবাস্তব গল্প।
টেক্সটের মধ্যে যেমন থাকে ইনার টেক্সটের জটিল এবং বহুল বিচিত্র কারিকুরি তেমনই কখনও পত্রিকাকে কেন্দ্র করে কখনওবা নারীবাদ-সাম্যবাদ-পার্টিবাদ-উত্তরাধুনিকবাদ ইত্যাদি বাদ দেওয়া যাবে না এমন অজস্র ‘বাদ’ কে কেন্দ্র করে একেকটা লবির মধ্যে অসংখ্য ছোট ছোট লবি তৈরি হয়। তারপরে সেই ছোট লবিরাই আবার নিজেদের মধ্যে খেলা লাগিয়ে দেয়। লবির প্রাণপুরুষ দাদা বা দিদির কাছে কে এগিয়ে যাবে, কে কতটা গুছিয়ে নেবে তার খেলা। সেই খেলায় কোন লেখক বেকায়দায় খেললে তারও কলেজস্ট্রিট থেকে নির্বাসন নিশ্চিত। মজার এইসব জাদুবাস্তব গুণেগেঁথে নিয়ে, মুচকি হাসতে হাসতে গোঁফজোড়াতে তা দিতে দিতে মার্কেজ সাহেব এরপর নিশ্চই চলে যাবেন, সারা বিশ্ব জুড়ে তাঁর কত পাঠক! শুধুই কলেজস্ট্রিটে আটকে থাকলে চলবে? আর আমরাও ফিরে আসব বাস্তবে।
দিলখুশা কেবিনের উল্টোদিকে চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে কলেজের সহপাঠী বর্তমানের এক প্রকাশকবন্ধুর সঙ্গে আড্ডা মারছিলাম এক সন্ধ্যায়। কথায়কথায় কলেজস্ট্রিটের দিকে আঙুল তুলে আমার বন্ধু জিজ্ঞসা করেছিল; ‘ বড়বাজারে লিখলে পয়সা পাওয়া যায় সেখানে এমন ল্যাং মারামারি চলতে পারে। কিন্তু ওখানে এত কামড়াকামড়ি কেন?’ সত্যি তো! এপাড়াতে এত কামড়াকামড়ি কেন? এখানে লিখলে পয়সা পাওয়া যায় না সত্যি! অবশ্য বলা হয়… প্যাশনের জন্য-সাহিত্যের গতিপথ বদলের জন্য -সমাজ পরিবর্তনের জন্য এই সাহিত্যের আন্দোলন…পয়সা নিলে বা লেখা, পত্রিকা বিক্রি করলে পুঁজির দাস হয়ে যেতে হয় আর পুঁজির বিরুদ্ধেই তো লড়াই!
এখন অবশ্য একটা নতুন আন্দোলন গড়ে উঠছে। প্রতি লিটল ম্যাগাজিন পিছু একটি প্রকাশনা হাকতে হবে আর প্রকাশনা যেহেতু ব্যবসা তাই পুঁজির নিয়মেই সেই ব্যবসা চলবে। বিজ্ঞাপন নিতে হবে, পত্রিকা বেচতে হবে, বই বেচতে হবে, লাভের অঙ্ক ঘরে তুলতে হবে, লেখকদেরকে অবশ্যই নিজের বই কিনে নিতে হবে ও বেশ কিছু বই বিক্রি করে দিতে হবে। এভাবে সবল একটি প্রতিষ্ঠানই পারবে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার পতাকা বয়ে নিয়ে যেতে। লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের ইশতেহারে যেসব আদর্শ লেখা আছে সেই আদর্শই যাতে দ্রুত বাস্তবে নেমে আসে জাদুবাস্তবে হারিয়ে না যায় তাই এই নতুন আন্দোলন। প্যাশন, সমাজ-পরিবর্তন, আদর্শবাদ এসব আদর্শের কথা এই আন্দোলনের মূলমন্ত্র তাই সহযোদ্ধাদের মধ্যে মোটেও কামড়াকামড়ি হওয়ার কথা না!
কিন্তু একইপক্ষে যুদ্ধ করেও দ্রোণ আর কর্ণ কি পরস্পরকে খুব ভালবাসতেন? হিংসা আছে, হিংসা থাকে। থাকে আমাদের মজ্জায় মজ্জায়! বড় আর ছোট যে বাজারেই হোক। লেখক কিংবা কৃষক যেমন মানুষই হই না কেন আমরা… হিংসা নামের প্রবৃত্তির হাত থেকে কি আমাদের মুক্তি আছে? সমাজতাত্ত্বিকরা বলেন ঐ হিংসা ছিল বলেই তো আমরা একদিন মাটি খুড়ে ফলমূল খাওয়া জন্তু থেকে আজ মহাকাশচারী মানুষ হয়ে উঠেছি। হিংসা না থাকলে, প্রতিযোগিতা না থাকলে, প্রতিযোগীকে নিকেশ করার ইচ্ছে না থাকলে এই সভ্যতার প্রদীপ নিভে যেত। হিংসার কারণেই যেমন ছুরি থেকে অ্যাটম বোমা আসে তেমনই প্রতিবেশী দেশের তুলনায় নিজের দেশকে-সমাজকে আরও ভাল রাখার ব্যবস্থা খোঁজা হয়! তাহলে কলেজস্ট্রিটের আর কী দোষ? হ্যাঁ এইভাবে খুঁজলে কলেজস্ট্রিটের লেখক-সমালোচক-সম্পাদকদের কোনো দোষ নেই। দোষ নেই হিংসার, হিংসুটেদের। কারুর, কোত্থাও, কোনো, দোষ নেই;… আমার বা আমাদের মত নয় বলে অন্যদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে যাদের মুছে দেওয়া হয়, যাদের ঘরের মর্মান্তিক অত্যাচারিতা মেয়েদের শোভাযাত্রা হয় কে জানে তারা এসব নিয়ে কী ভাবে?
আরও পড়ুন – কলেজস্ট্রিট থেকে – পর্ব ৩
ভরা বর্ষার কান্নায় যুক্তিতে হারতেও হারতেও মন মানতে চায় না হিংসাই ধ্রুব, হিংসাই সত্য। রোজ বিকেলে ছুটির পর এখনও কলেজস্ট্রিট দিয়ে কিশোর-কিশোরীরা হাসতে হাসতে ঘরে ফেরে। ক্যাথিড্রাল চার্চের ঘন্টা বাজে। নাখোদা মসজিদের আজান ছড়িয়ে পড়ে শহর জুড়ে। সন্ধ্যা-গোধূলিতে ঠনঠনে কালিবাড়ির কাঁসর-ঘন্টার প্রতিধ্বনি ছুঁয়ে যায়। আর কোথায় যেন মন্দ্রিত হয় জীবনানন্দের সেই অমোঘ মন্ত্রশ্লোক…
এই পৃথিবীর রণ রক্ত সফলতা সত্য
তবু শেষ সত্য নয়
কলকাতা একদিন কল্লোলিনী তিলোত্তমা হবে
তবুও তোমার কাছে আমার হৃদয়
শহরেরই আরেক সন্তান বিশ্বমানব-কবি আজীবন মানুষের ভেতর পশুত্ব আর মানবত্বের লড়াই-এর কথা বলেছেন আর যতই বিপন্নকাল আসুক না কেন পশুত্বের উপর যে মানবত্বের জয় হবেই সেই প্রত্যয় বলে গেছেন বারবার। কলেজস্ট্রিটের পিচ-অ্যাসফল্টে কান পাতলে শোনা যায় অগুনতি লেখকের, পাঠকের,মানুষের মগ্ন উচ্চারণ…শান্তি শান্তি শান্তি। তবুও হিংসুটেদের হিংসুক মন জেগে থাকে! কবে তার হাত থেকে মুক্তি পাব আমরা?
শেষ করব সদ্য প্রয়াত বিশিষ্ট কবি-শিশু সাহিত্যিক রূপকদা; রূপক চক্রবর্তীর একটি পাঠকপ্রিয় কবিতা দিয়ে। রুপকদার সঙ্গে কলেজের দিনে আলাপ। ওর কবিতা ভাল লাগত। ভাল লাগত ওর, ওর বন্ধুদের দামালপনা, সৃষ্টিশীলতা। কিছুটা উদ্বুদ্ধ হয়েছি। যাই হোক, পাকাপাকি লেখালেখির জগতে আসার পর ভেবেছি দেখা হবে, বা একদিন গিয়ে দেখা করি কিন্তু হয়নি। অনেকের সাথে এই কলেজস্ট্রিটে হেঁটেছি রূপকদার সাথে হল না! এ কবিতা রূপকদার কবিতা, ওর বাবা-মার কবিতা; বলতে গেলে কয়েকটি বাঙালি প্রজন্ম যেখানে আমি, আমরাও আছি যারা হিংসা, লোভ, অমানবিকতার জগতের বাইরে একটি সৎ দুনিয়া, রবি ঠাকুরের দুনিয়ার স্বপ্ন দেখে, তাদের সবার কবিতা।
“পঁচিশে বৈশাখ”
রূপক চক্রবর্তী
তখন আমি বাবার পাশেই ঘুমিয়েছিলাম
আমাকে কেউ ডাকেনি।
তখন খুব জ্বর বাবার।
মাথায় জলের ধারা দিতে দিতে মা গাইছিল,
একা মোর গানের তরী…
মা কী করে জানতো! আমি তো তখন ছোট
আমি তো তখন ঘুমে।
দুপুরেই বাবা পাশ ফিরতে ফিরতে চলে গেল,
শুধু ঠোঁট নেড়ে বলেছিল, আগুনের পরশমণি..
আমার বাবা কে জি বি ছিল
আমার বাবা সি পি আই ছিল
ঘাটকাজের পর গীতবিতানের প্রথম খন্ডে উপুড় হয়ে পড়ি
৯৪ পৃষ্ঠায় ২১২ নম্বর গানটা নেই।
উঠোনে তখন অনেক লোক থৈ থৈ করছে লোক ঘরে-বারান্দায়।
যাত্রা শুরুর মুহূর্তে শিশিরজেঠু বলেছিল, হরিধ্বনি দিও না কেউ।
তবে কি মা!
মা তখন ওই ৯৪ পৃষ্ঠার ২১২ নম্বর গানটা আগুনের পরশমণি বাবার ঠান্ডা হাতের মধ্যে
রেখে দিতে দিতে বলেছিলো, আমার তো কোনও ঠাকুর নেই
তুমি ওকে দেখো রবিঠাকুর।”
সবাই ভাল থাকার চেষ্টা করবেন। কলেজস্ট্রিট থেকে আজ এই পর্যন্ত।