বংশী নদীর পাড় ঘেঁষে ছোট্ট একটি গ্রামে আমার বেড়ে উঠা। এর স্রোতস্বিনীর যৌবন এবং বৃদ্ধাবস্থার সঙ্গেও পরিচিত। আমাদের শিশুকালের নদী এখন আর তেমন বয়ে চলে না। দুরন্ত কিশোর ব্রিজ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে না বংশীর পানিতে, কয়েক বছর আগেও যেখানে থৈ থৈ করত। এটাই বুঝি বাংলাদেশের নদীর বাস্তবতা! যেখানে প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে, নদীগুলো তার স্বকীয়তা হারিয়ে দোপেয়ে ‘প্রকৃতিখেকো’দের কথিত উন্নয়নের বলি হচ্ছে, সেখানে এর বাইরে আশা করাটাই দুরাশা!
বাংলাদেশে আইনত নদী ‘জীবন্ত সত্তা’। প্রতিনিয়ত নদীর চলার পথ আটকে, দখল করে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অথচ এর বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলেই দেখানো হচ্ছে উন্নয়নবিরোধিতার জুজু। আর ওই জীবন্ত সত্তার হত্যাকারীরা থাকছে সব সমালোচনার ঊর্ধ্বে।
কয়েকদিন ধরেই ইট-পাথরে গাঁথা ঢাকা শহরের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এর মধ্যেই পুরো দেশে চলছে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের বীজ বপন। এমন অস্থির সময়ে প্রাণের টানে, শৈশবের টানে এবং নদীর পাড়ে বেড়ে উঠার টান থেকেই ‘প্রিয় নদীর গল্প’ বইটি পড়তে শুরু করি।
স্মৃতিচারণমূলক প্রবন্ধ সংকলন বলেই বইটি একনাগাড়ে পড়ে ফেলা যায়। এখানে অতিরঞ্জিত কচকচানি নেই। বাহুল্য নেই। বানোয়াট গল্প নেই। যেটি রয়েছে, সেটি হলো– নদী জীবনের প্রতিচ্ছবি। প্রতিনিয়ত জানতে চাওয়ার অদম্য ইচ্ছা থেকেই এমন একটি বই পাঠ করা শুরু করেছিলাম। আর তা নিয়ে পাঠপ্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা এই লেখাটি
প্রকৃতি ধ্বংসের মহোৎসব যখন চলছে, তখনও কিছু মানুষ নিজের ভেতরে আশা জাগিয়ে রাখেন, যে বা যারা শুধুমাত্র অর্থের মোহে দৌঁড়ায় না, নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে, নিজের অস্তিত্বকে ফিরিয়ে আনার তাগিদ অনুভব করেন। লেখক, গবেষক ফয়সাল আহমেদ ‘প্রিয় নদীর গল্প’ বইটির মাধ্যমে সে চেষ্টাটুকুই করেছেন। চরম দুঃসময়ে নদ-নদীগুলোর একান্ত সঙ্গী হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর সম্পাদিত নদীবিষয়ক এ বইটি ‘জাগতিক প্রকাশন’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
আরও পড়ুন – ফয়সাল আহমেদ এর নতুন বই- সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম : রাজনীতির শুদ্ধপুরুষ
মানুষের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে একটি নদীর শৈশব, যৌবন বা বৃদ্ধাবস্থার কথা কল্পনা করা যেতে পারে। যৌবন যেমন দুঃসাহসী কাজের সময়; নদীর ক্ষেত্রে তেমনি এটি সব ভেঙেচুরে এগিয়ে যাওয়ার সময়। একসময় নদী স্তিমিত হতে থাকে। ক্ষয় করার ক্ষমতা একেবারেই কমে যায়। জীবনের মতোই নদীর গতিমাত্রা কমে যায়। খুবই এঁকেবেঁকে ধীরেসুস্থে চলে। তবে ব্যতিক্রম হলো–স্বাভাবিক নিয়মেই নদী আবারও ভরাট হয়, যৌবনের ঢেউ খেলা করে; কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে জীবন-প্রদীপ একবার নিভে গেলে, তা আর জ্বলে উঠে না!
ফয়সাল আহমেদ সম্পাদিত আলোচ্য বইটি হাতে পেয়েই কেমন এক ভালোলাগা কাজ করছিল। এখানে শুধু বড় নদী নয়, বাংলার আনাচে-কানাচে বয়ে যাওয়া ছোট ছোট নদী, সীমান্ত নদীগুলো স্থান পেয়েছে। নদীর হাসি, কান্না, দুঃখের অবিরল প্রবাহমান ইতিহাসের সঙ্গে, নদীর সঙ্গে বসবাসকারী মানুষ, জনপদ ও সংস্কৃতির কথামালাও তুলে এনেছেন লেখকগণ। যা এক নির্ভরযোগ্য, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও বাস্তবধর্মী বৃত্তান্ত।
সম্পাদিত বইয়ের বিরাট গুণ হলো–একই বিষয়ে হাজাররকম অভিজ্ঞতা হয়। কখনো সেটি আপ্লুত করে, কখনো আনন্দে মাতিয়ে তুলে। এখানে তার কিছুটা ব্যত্যয় ঘটেছে। কেননা, প্রায় সব লেখকই তার আবেগের ঝুলি তুলে ধরেছেন। এর বাস্তব ভিত্তি হলো–নদীগুলো আর বাঁচানো যাচ্ছে না, আমাদের নদী ভরাট হচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে তার নাব্য! আমাদের শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিগুলো আজ কেবলই আবেগের ঝুলিতে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন – চিরকুট একটি মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প-সংকলন
বইটিতে বাংলাদেশ ও ভারতের ৩১ জন লেখকের আশা-হতাশার বাস্তবতা উঠে এসেছে। বাংলাদেশ পর্বে লেখক তালিকায় আছেন–ফারুক মাহমুদ, সৈয়দ কামরুল হাসান, হামিদ কায়সার, মনি হায়দার, সত্যজিৎ রায় মজুমদার, রেজাউল করিম, রুখসানা কাজল, মু আ লতিফ, সুমনকুমার দাশ, সন্তোষ কুমার শীল, মোহাম্মদ এজাজ, মুহাম্মদ মনির হোসেন, পিয়াস মজিদ, মাসুম মাহমুদ, হাসান মাহবুব, মো. ইউসুফ আলী, মনির হোসেন, আলম মাহবুব এবং আলিফ আলম। ভারত পর্বে লেখক তালিকায় আছেন–গৌতম অধিকারী, রাজেশ ধর, তাপস দাস, সুপ্রতিম কর্মকার, তুহিন শুভ্র মন্ডল, শৌভিক রায়, শুভময় পাল, শর্মিষ্ঠা কর, সুস্মিতা চক্রবর্তী, সুদর্শন ব্রহ্মচারী, কৌশিক বিশ্বাস, মনোনীতা চক্রবর্তী।
দুই বাংলার লেখকদের লেখা নিয়ে একটি সৃজনশীল সংকলন করা হয়েছে। এতে কথিত উন্নয়ন-দর্শনের নামে নদ-নদীর ধ্বংসের যে পাঁয়তারা চলছে, তার বিরুদ্ধে কিছু স্পষ্ট কথনও রয়েছে। বাংলার দুই প্রান্তের লেখকরা নদী ধ্বংসের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত এবং তার বাস্তবায়নে যে নোংরা খেলা চলছে পুরো ব্যবস্থাপনায়–সে কথাই প্রাধান্য দিয়েছেন। লেখকরা তাঁদের নিজ নিজ এলাকার নদীর কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে নিজেদের জীবনের গল্পও সবলীলভাবে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছেন। ওইসব নদীর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাঁদের জীবনের সুখ-স্বপ্ন, আনন্দ-উল্লাস, দুঃখ-বেদনা এবং মুগ্ধতার ইতিবৃত্ত।
নদীর সঙ্গে রয়েছে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক। নদীর চারপাশেই আমাদের বসবাস। নদীকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে বাজার-বসতি,শিল্প-সাহিত্য ও সভ্যতা। আবার অন্যদিকে একশ্রেণীর মানুষ ধ্বংস করছে নদী। ধ্বংস করছে মানুষের স্বপ্ন ও সভ্যতা।
বইটির ফ্ল্যাপ থেকে –
‘দুর্বৃত্তদের বিপরীতে কল্যাণকামী মানুষের মননে রক্তক্ষরণ সচল রাখতে পারছে না নদীর নাব্য। আশাবাদী মানুষও নাছোড়বান্দা, বাইরে না হলেও ভেতরে তার নিজস্ব নদীতে লেগেই থাকে জৈবনিক জোয়ার। অদ্ভুত এক ভালোবাসায় নদীর জন্য আগলে রাখে সতর্ক প্রহরা। সেখানে উচ্ছ্বসিত উদ্দাম বন্যায় মানুষের বসতি ভাঙে নদী, আবার এই বন্যাই তার মাঠে মাঠে সোনা ফলায়..!’ এটিই চরম সত্য কথা। আমরা শিশুকাল থেকে শুনে আসছি যেবার বন্যা হয়, সেবার খুব ভালো ফলন হয়। বন্যার পর নদীর চর যখন শুকিয়ে যায়, তখন সেখানে সর্বোচ্চ ফলন হয়। একটি কৃষিনির্ভর দেশের মূলভিত্তিই তার নদ-নদী। আর তা ধ্বংসের মানেই যে গণবিরোধী, দেশবিরোধী অবস্থান, তা নিশ্চিত করেই বলে দেওয়া যায়।
‘…কতবার যে বেড়িয়েছি বুড়িগঙ্গার ওপর দিয়ে কতভাবে কত ঋতুদিনে, বলে শেষ করা যাবে না। দাদাবাড়ি থেকে নানাবাড়ি আসা-যাওয়ার মাঝখানে পড়তো শহর ঢাকা। ফলে ঢাকার ক্রমবিকাশের ধারাটাও লক্ষগোচর হয়েছে। কীভাবে বদলে গেল এর ল্যান্ডস্কেপ, কবে কোন মাঠটার মৃত্যু ঘটল, জলের কোন ধারা গেল থেমে, চেনা-অচেনা গাছগুলো হারিয়ে গেল কোথায়–নির্জন স্বচ্ছ সুন্দর পথ, ফুটপাত ভরে উঠল অজস্র মানুষ–বুড়িগঙ্গা কীভাবে কীভাবে ধর্ষিতা হলো–সব যেন ধারাবাহিক এক দৃশ্যপট! অবশ্য পুরো ঢাকার নয়, যেটুকু আমার চোখের আয়তসীমার মধ্যে ছিল, যেতে-আসতে দৃশ্যমান হতো। ধরুন গ্রাম থেকে কোনাবাড়ি বাসস্টেশন, কোনাবাড়ি থেকে ঢাকার গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া, সেখান থেকে সোয়ারিঘাট, সোয়ারিঘাট থেকে বুড়িগঙ্গা-জিনজিরা হয়ে রাজাবাড়ি–এই যাত্রাপথের দুধার, দুধার ছাপিয়ে হয়তো আরও দূর-দিগন্ত, যত দূর চোখ যায় সেই প্রান্তবর্তী সীমানা! তবে মুক্তিযুদ্ধের আগের কোনো স্মৃতিই মনে নেই, তখন আমার বয়স ছিল মাত্র তিন।…’ ‘আমার শৈশব নদী’ শীর্ষক প্রবন্ধে লেখক হামিদ কায়সার কথাগুলো লিখেছেন। এ ব্যথা, আর্তনাদ, ক্ষোভ কেবল লেখকের ব্যক্তিগত উপলব্ধির পরিসরে আবদ্ধ নয়; বরং তা এ জনপদের মানুষের নির্মম বাস্তবতা, যার প্রতিফল ভোগ করতে হচ্ছে কোটি মানুষকে।
প্রতিটি মানুষই তার শৈশবের স্মৃতিজড়িত সময়গুলো অনুভবে-চিন্তায়-চেতনায় ঠাঁই দিয়ে রাখতে চায়, নিজেকে সেভাবেই ভাবতে চায়; কিন্তু আজকের সমাজবাস্তবতায় সেটি প্রায় অসম্ভব! জীবন যেখানে ভারাক্রান্ত পাহাড়সম মনে হয়! এ বইটি পড়ে জীবনের গতিপথ সম্পর্কে একটি রেখাপথ নির্ণয় করা যায়। জীবনের পটপরিবর্তনগুলো সমাজের প্রতিটি পরিবর্তনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
অনেক নদীর নাম এ সংকলনে যুক্ত হয়েছে, যা হয়তো আমার মতো অনেকের কাছেই অজানা। তেমন একটি নদীর নাম পাওয়া গিয়েছে মনি হায়দার লিখিত ‘কচানদী : নদীও নারীর মতো’ শীর্ষক প্রবন্ধে। এখানে লেখক কচানদীর সঙ্গে তাঁর আত্মিক সম্পর্ক তুলে ধরেছেন। নদী ও মানুষ যেন অবিচ্ছেদ্য অংশ। লেখক বলেছেন ‘কচানদীর স্মৃতি, ঘটনা কখনো আমার জীবনে ফুরাবে না। আমার সকল লেখার উৎস কচানদীর ঢেউ, স্রোত…।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘স্রোতের সর্বনাশায় কচানদীর পাড় ভাঙে আর ভাঙে অজস্র মানুষের ভিটা, সংসার… নদীর ভাঙনে মুহূর্তের মধ্যে সব হারিয়ে মানুষ নির্বিকার সর্বহারায় পরিণত হয়। এই ভাঙনের খেলায় খেলে যায় খেয়ালি একরোখা কচা, অবিরাম, নির্দয় ক্রোধে। কচানদী ভাঙে, ভাঙছে সংসার, ঘরবাড়ি, জায়গাজমি, স্কুলঘর, স্বপ্ন, সব সব বরবং সব…। থেকে যায় কেবল মন মাতানো স্মৃতি, বিরহ আর জলের সঙ্গে তরঙ্গের মিহি মৈথুন।’ এভাবেই লেখক তার শৈশবের ঘোরলাগা স্মৃতিকে কাব্যিক ঢঙে তুলে ধরেছেন। একজন পাঠক হিসেবে লেখকের কাছ থেকেই হয়তো এটিই বড় পাওয়া।
সুমনকুমার দাশের ‘লোকগানের বিচিত্র ধারা’ বইটি কিছুদিন আগে পড়েছি এবং এ নিয়ে পাঠ-প্রতিক্রিয়াও লিখেছিলাম। ‘প্রিয় নদীর গল্প’ বইয়ে এ লেখকের ‘আমার দাড়াইন’ শীর্ষক প্রবন্ধটি পড়ে আরও স্পষ্ট হওয়া যায় তাঁর অনুসন্ধানী লেখনী সম্পর্কে। তিনি দাড়াইন নদ নিয়ে লিখেছেন, যে নদ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই হয়তো তেমন জানাশোনা নেই। তিনি লিখেছেন, ‘কখনো উত্তাল, কখনো শান্ত এই দাড়াইন নদ নিয়ে কোনো কবিতা-গান-গল্প উপন্যাস রচিত হয়নি। তিতাস, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, কপোতাক্ষ, শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, সুরমা কিংবা আরও নদ-নদীর মতো কোনো সাহিত্যিকের এক চিলতে লেখায়ও ঠাঁই হয়নি সুদর্শন দাড়াইনের। তবু নিজের মতো চুপচাপ নিরবধি বহে চলেছে অভিমানহীন দাড়াইন নদ। এর অস্তিত্ব কেবল ভূমিতে নয়, আমাদের মনেও।’ এখানেই লেখকের সার্থকতা। নিজ অস্তিত্বকে তুলে আনা।
‘ঘুসকি’ নদী। যেটির অবস্থান দিনাজপুরে। এর এখন আর কোনো অবস্থান রয়েছে কিনা সেটিই সন্দেহ! এ রকম একটি নদীর বয়ে চলার ইতিহাস নিয়ে লিখেছেন কৌশিক বিশ্বাস। তিনি লিখেছেন, ‘এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট জালের বাঁধ দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছ ছেড়ে মৎস্য চাষ করলে উপার্জন ও জীবিকার এক নতুন দিকের যে উন্মোচন হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ঘুসকি নদীর গতিপথ এলাকাগুলোতে বিক্ষিপ্তভাবে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন নিবিড় বনসৃজন লক্ষ্য করা যায়। তবে স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে ঘুসকির দুইপার ধরে নিবিড় বনসৃজন করলে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার ও পরিবেশ সংরক্ষণ দুইই হতে পারে। এ নদীর গতিপথে প্রচুর বাঁক লক্ষ করা যায়; যেখানে বছরের দীর্ঘ সময় জল দাঁড়িয়ে থাকে।’ নদীকে বাঁচানোর যে আকুতি লেখক প্রকাশ করেছেন, তা আপাতদৃষ্টিতে সুন্দর; কিন্তু এর বাস্তবায়ন নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন! তবুও মানুষ আশায় বাঁচে, বুকের কোণে জমা রাখে আশার ফুলঝুরি।
প্রচ্ছদশিল্পী সমর মজুমদারের চিত্রপটে বইটি আরও আকর্ষণীয় এবং নান্দনিক হয়ে উঠেছে। তবে এসব ইতিবাচকতায় যে কারণে কিছুটা হলেও ব্যত্যয় ঘটেছে, কিছুটা বিরক্তিবোধও তৈরি হয়েছে সেটি হলো বানানঘটিত দুর্বলতা ও ভুল বানান। এ বিষয়টি সম্পাদক এবং প্রকাশকের উপর ছেড়ে দেওয়াই শ্রেয়। আশা করি তারা পরবর্তী সংস্করণে এ বিষয়টি মাথায় রাখবেন।
আজকাল প্রধানত তিন ধরনের লেখকের দেখা পাওয়া যায়–১. যারা ক্ষমতার চাটুকারি করতে পারে, বা ক্ষমতার অংশীদার; ২. টাকার গুণে লেখক, প্রয়োজনে তারা লেখা কিনে লেখক হন–শখ বলে কথা; ৩. হাতেগোনা কয়েকজন লেখার গুণে প্রকাশনায় স্থান পান, অনেক মানসম্পন্ন লেখক কখনো পাদপ্রদীপের আলোর দেখাটুকুও পান না।
একইভাবে এমন অনেক গ্রন্থ বাজারে ব্যাপক প্রচারণায় থাকে, যা কার্যত কোনো চিন্তার খোরাক যোগায় না; অথচ ‘প্রিয় নদীর গল্প’ সংকলনের মতো বইগুলো হয়তো অনেক ক্ষেত্রে পাঠকের অগোচরেই পড়ে থাকে। কারণ এখানে নেই কোনো চাটুকারি মতাদর্শ, নেই নিজেকে বিকিয়ে দিয়ে অন্যের পিঠ চুলকানোর আদর্শ, নেই পয়সার ঝনঝনানি! তবে একজন পাঠক হিসেবে এর বহুল প্রচার-প্রসার প্রত্যাশা করাটা বোকামি নয় নিশ্চয়!
বই : প্রিয় নদীর গল্প, সম্পাদনা: ফয়সাল আহমেদ, প্রকাশক: জাগতিক প্রকাশন, প্রচ্ছদশিল্পী: সমর মজুমদার, মূল্য: ৩২০।
আরও পড়ুন – ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে “বাংলার মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী”