বাংলা ভাষা-সাহিত্যভিত্তিক সংগঠন বাংলায়ন সভার আয়োজনে ২১ জুলাই, শুক্রবার বিকাল সাড়ে চারটায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘একুশ শতকের সাহিত্য’ নিয়ে শিল্প-সাহিত্যের বৈঠক।
আয়োজনে একুশ শতকের কবিতা, প্রবন্ধ এবং কথাসাহিত্য নিয়ে আলোচনা উপস্থাপন করেন কবি ও প্রাবন্ধিক ড. মাসুদুজ্জামান ও কবি সৈকত হাবিব। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলায়ন সভার মুখপাত্র লেখক ও গবেষক ফয়সাল আহমেদ। সঞ্চালনা করেন কবি সৌম্য সালেক।
ড. মাসুদুজ্জামান বিংশ শতকের আন্তর্জাতিক এবং বাংলা সাহিত্যের ধারা আলোচনা করেন। আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘বিশ শতকের সবচেয়ে বড় অর্জন প্রযুক্তির বিকাশ। আজকে পত্রিকায় এসেছে কৃ্ত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংবাদ পাঠিকা অপরাজিতা চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে সংবাদ পাঠ করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বাংলাদেশেও ঢুকে গেছে এটা তার প্রমাণ। এর পরে দেখা যাবে, আর কাউকে নিউজরুমে সংবাদপাঠ করতে হবে না। কিন্তু অপরাজিতাকে দেখে মনে হলো আবেগহীন, অভিব্যক্তিহীন। আমরা দেখলাম, হিউম্যান এবং নন হিউম্যান প্রযুক্তির মধ্যে কত ফারাক?’ তিনি বিশ শতক থেকে শুরু করে একুশ শতকের প্রথম দুই দশকের কবিতার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করেন। বৈশ্বিক রাজনীতির প্রভাবে তৃতীয় বিশ্বের ভাষা ও সাহিত্যের সংকট সমাধানে তরুণদের দায়িত্বের ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
সৈকত হাবিব সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্য নিয়ে কথা বলেছেন, তাঁর আলোচনার এক পর্যায়ে বলেন ‘বাংলাদেশে প্রচুর মিডিয়া। সেখানে সাহিত্যের আলোচনা কম পাবেন। সপ্তাহান্তে সাহিত্যপাতা বের হয়। কিন্তু সেখানে সাহিত্যের থেকে বেশি থাকে বন্ধুত্বের সম্পর্ক এবং ক্ষমতা। পড়ার মতো লেখা, চিন্তা করার মতো লেখা, স্পার্ক করার মতো লেখা আছে কী?’ তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৃষ্ট সাহিত্যকে গার্বেজ বলেছেন। কোন ধরনের সম্পাদনা ছাড়া মন যা চাইছে তা-ই প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ উগরে দিচ্ছে। এগুলো আর যা-ই হোক সাহিত্য বলতে তিনি নারাজ।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, শামস সাঈদ, খালেদ চৌধুরী, গাজী মনছুর আজিজ, জব্বার আল নাঈম, সাম্মী ইসলাম নীলা, খালেদ রাহী, চামেলী বসু, সাইফ বরকতুল্লাহ, নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, যোবায়ের মিলনসহ অর্ধশত সুধী সংস্কৃতিজন।
উল্লেখ্য বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ‘বাংলা বিশ্বময়’ স্লোগানকে ধারণ করে বাংলায়ন সভা নিয়মিত শিল্প-সাহিত্যের বৈঠক আয়োজন করে আসছে।