অভিধান সংস্কৃতি ও এভরিম্যানস ডিকশনারি

অভিধান বা ডিকশনারি কতো চমৎকার এবং ব্যবহারবান্ধব হতে পারে সদর্থক অর্থেই তার পরিচয় মেলে ‘এভরিম্যানস ডিকশনারি’ ব্যবহারের সময়। মুগ্ধতা কেবল ছড়িয়ে পড়ে না, রীতিমতো গ্রাস করে। বাজারে কত অভিধানই তো রয়েছে। কিন্তু এই অভিধান সদর্থক অর্থেই আলাদাভাবে দৃষ্টি কাড়ে।

বাংলা ভাষাভাষি বিদ্বৎজন ও শিক্ষার্থী মাত্রই বাংলা একাডেমির ‘ইংলিশ টু বেঙ্গলি’ ও ‘বেঙ্গলি টু ইংলিশ’ অভিধান এবং সংসদ বাংলা অভিধানের সঙ্গে সম্যক পরিচিত। এই দুই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে আরও নানা ধরণের অভিধান। যার অনেকগুলো আবার বিশেষায়িত। বাঙালির জীবনকে যেসব অভিধান গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর প্রধান সম্পাদকীয়তায় প্রকাশিত বাংলা একাডেমির ইংলিশ-বেঙ্গলি ডিকশনারি এবং মোহাম্মদ আলীর প্রধান সম্পাদকীয়তায় প্রকাশিত একই প্রতিষ্ঠানের বেঙ্গলি-ইংলিশ ডিকশনারি। এ ছাড়া যে কয়েকটার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়, সেগুলো হল, আশুতোষ দেব সম্পাদিত স্টুডেন্ট ফেবারিট ডিকশনারি, শৈলেন্দ বিশ্বাস সম্পাদিত সংসদ ইংলিশ-বেঙ্গলি ডিকশনারি এবং বেঙ্গলি-ইংলিশ ডিকশনারি।

বর্তমানে নানা ধরণের অভিধান রয়েছে। এ তালিকায় যুক্ত হচ্ছে আরও নতুন নতুন বিষয়। এই প্রবণতা অবশ্যই প্রশংসার। বিশেষায়িত অভিধানের বাইরে সর্বজনে বিশেষভাবে পরিচিত দুই প্রকৃতির অভিধান হল, এক. ইংলিশ-বেঙ্গলি ডিকশনারি এবং দুই. বেঙ্গলি-ইংলিশ ডিকশনারি। যারা বা যেসব প্রতিষ্ঠান অভিধান প্রকাশে, প্রণয়নে সকল প্রকার প্রযত্ন দিয়ে থাকেন ব্যতিক্রম বাদে তারা এ দুটি অভিধান প্রকাশ করেন। এতে ব্যবসায়িক লাভালাভের যোগ যেমন রয়েছে তেমন আছে বৌদ্ধিক পরিসরে বড়ো রকমের অবদান রাখার সুযোগ। অভিধান সংকলন ও সম্পাদনা যারা করেন তাদের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকে দ্বিতীয় ধাপের উদ্দিষ্ট বিষয়।

আমরা জানি, অভিধান প্রণেতারা কেউ ত্রিশ বছর, কেউ বিশ বছর কেউবা টানা পনের বছর এই কাজে ব্যয় করেন, যার নজির দুর্লভ নয় মোটেই। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়কে বছরের পর বছর এ কাজে ব্যয় করা অনেকের পক্ষেই কেবল দুরুহ নয়, অসম্ভবও বটে। যারা করেন তার বিরলপ্রজ। কী পরিমাণ সাধনা থাকলে, কাজের প্রতি কোন পর্যায়ের প্যাশন জন্ম নিলে এভাবে শ্রম, একাগ্রতা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, ধৈর্য্য, অধ্যবসায়, প্রেম ও পবিত্রতার মিশেলে অভিধান সংকলন ও সম্পাদনা করা যায় তার স্বাক্ষর মেলে অভিধানের পৃষ্ঠা জুড়ে-প্রতিটি শব্দের শব্দার্থে ও ব্যুৎপত্তিগত দিকের বিবিধ নির্দেশনায়।

নরেন বিশ্বাস যখন বাংলা উচ্চারণ অভিধান সংকলন ও সম্পাদনার কাজ করছিলেন বছরের পর বছর ধরে। তখন সমস্যা দেখা দেয় চোখের দৃষ্টিশক্তিতে । ক্ষীণ হয়ে আসে দৃষ্টির ঔজ্জ্বলতা। ডাক্তার সাফ জানিয়ে দেন বন্ধ করতে হবে অভিধান প্রণয়নের কাজ, নিদেনপক্ষে দিতে হবে বিরতি। যে কাজের জন্য তিনি বাজি রেখেছেন জীবন, দৃষ্টিশক্তির জন্য যদি সেই কাজই বাদ দিতে হয়, তাহলে? নরেন বিশ্বাস বেছে নেন অন্যপথ। সিদ্ধান্ত নেন যে কদিন দৃষ্টিশক্তি আছে এর মধ্যেই সেরে ফেলতে হবে অভিধানের কাজ। এই লেখককে তিনি সেইসময় বলেছিলেন, ‘আচ্ছালাতু খাইরুম মিনান নাউম’ শুনে সবাই যখন উঠে পড়ে। তখন আমি কাজ বন্ধ করে একটু ঘুমাতে যাই, কারণ সকালে উঠতে হবে, আটটায় আবার ক্লাশ আছে। এসব প্রসঙ্গ হাজিরের নেপথ্যের কারণ, ‘এভরিম্যানস ডিকশনারি’র নিবিড় পাঠ।

দুই সহস্রাধিক পৃষ্ঠার ‘এভরিম্যানস ডিকশনারি’ আমাদেরকে অভিধান পাঠের প্রতি শুধু আরও বেশি আকৃষ্ট করে না প্রত্যাশার মাত্রাকেও বাড়িয়ে দেয়। শব্দের অর্থ ও ব্যুৎপত্তিগত নির্দেশনায় যখন দৃষ্টি দেয়া হয় তখনই মনে হয়, কতোটা সাধনার ফসলে জারি রাখছি আমাদের মন ও মনন।

আনন্দের কথা এভরিম্যানের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য শুধু পাঠককূলকে সন্তুষ্ট করেনি, অন্যদের চিত্তকেও করেছে চমকপ্রদ, চিত্তাকর্ষক ও ধন্যবাদ জাগানিয়া। যার স্বীকৃতি মিলেছে ২০০১ সালের আনন্দ পুরস্কার প্রাপ্তিতে।  উল্লেখ্য, ‘এভরিম্যানস ডিকশনারি’ অভিধানগ্রন্থের সম্পাদনাকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ অভিধানটির পাঁচ সদস্যের সম্পাদকমণ্ডলী ১৪০৭ বঙ্গাব্দের আনন্দ পুরস্কার পান। কেন এই পুরস্কার তার সওয়াল জবাবে কমিটির তরফে বলা হয়, ‘অভিধানের সম্পাদনাকর্মকে আনন্দ পুরস্কার দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী। শুধুই গদ্য বা পদ্যের বাইরে সাহিত্যের আঙিনায় জরুরি যে কাজগুলি অনেকটাই লোকচক্ষুর আড়ালে হয়ে চলেছে, এ বারের আনন্দ পুরস্কারে বস্তুত সেই ধরণের একটি প্রয়াসকেই সম্মান জানানো হল। এবং ইংরেজি থেকে বাংলা ভাষার অভিধান বেশ কয়েকটি থাকলেও ‘এভরিম্যানস ডিকশনারি’ নিশ্চিতভাবেই স্বতন্ত্র।’

অভিধান বলতে কী বোঝায় তার একটা সুন্দর বয়ান রয়েছে বাংলাপিডিয়ায়। যেখানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে অভিধানের একটা ধারাবাহিক ইতিহাসও জারি রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে বাংলা ‘অভিধান’ শব্দের অর্থ শব্দার্থ। তবে ব্যুৎপত্তিগত অর্থ যাই হোক, অভিধান বর্তমানে ইংরেজি ‘ডিকশনারি’ (Dictionary) শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবেই গৃহীত। অভিধানে শব্দের বানান, অর্থ, উচ্চারণ, প্রতিশব্দ, পরিভাষা, প্রতিবর্ণ ও ব্যাকরণবিষয়ক নির্দেশ থাকে। একটি শব্দ বাক্যের মধ্যে কত অর্থে প্রযুক্ত হতে পারে, অভিধান থেকে তা জানা যায়। সেখানে শব্দের উৎস ও ব্যুৎপত্তিনির্দেশ পাওয়া যায়। জ্ঞান বিজ্ঞানের অনুষঙ্গে জড়িত শব্দের সংজ্ঞা অভিধানে লিপিবদ্ধ থকে। কোনো একটি শব্দ কখন থেকে প্রথম ব্যবহৃত হয়ে আসছে, কখন থেকে কোন্ অর্থ ধারণ করছে, এসবের ইতিহাস অভিধান ধারণ করে। প্রায় অভিধানেই পরিশিষ্ট থাকে, ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োজনীয় বহু খুঁটিনাটি তথ্য সেখানে সংকলিত হয়। এ ছাড়া রয়েছে বিশেষ বিশেষ উদ্দেশ্যে অথবা বিশেষ কোনো বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে রচিত অভিধান, যেমন উচ্চারণ অভিধান, ব্যুৎপত্তি অভিধান, অপভাষার অভিধান, বানান অভিধান, ঐতিহাসিক অভিধান, সমাজবিজ্ঞান অভিধান ইত্যাদি। শেষোক্ত অভিধান দুটির মতো অসংখ্য পারিভাষিক অভিধান আজকাল বাংলা ভাষায় দেখা যায়।’

‘সহজ কথা কইতে আমায় কহ যে, সহজ কথা যায় না বলা সহজে।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খুব সহজ করে সহজ কথা বলা যে কতোটা দুরুহ, সেটা বলে গেছেন। অভিধানের মতো বইয়ে সেই সহজ কথা বলার চেষ্টা জারি রাখা তো আরও কঠিন। এভরিম্যান সেই কঠিন কাজটাকে বাস্তবিকই সহজ করে হাজির করেছেন । একটি অভিধানের পূর্ণাঙ্গরূপ কেমন হতে পারে তারও একটা মডেল হল এই ডিকশনারি। গৌরিপ্রসাদ ঘোষ ও তাঁর চার সহযোগী এক. আশীষ কুমার লাহিড়ি, দুই. বিশ্বনাথ ব্যানার্জি, তিন. মুক্তিপ্রসাদ ঘোষ, চার. প্রফুল্ল কুমার সরকার  কাজটিকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। সূচির দিকে নজর দিলে টের পাওয়া যাবে এর সামগ্রিকতা : সম্পাদকের নিবেদন, রচনা পদ্ধতির সংক্ষিপ্ত পরিচয়; উপক্রমণিকায় রয়েছে, ক. ইংরেজি ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক, খ. ব্যবহৃত বাংলা ভাষা, গ. দৃষ্টান্ত ও উদ্ধৃতির ব্যবহার, ঘ. ইংরেজি শব্দের উচ্চারণ নির্দেশ, ঙ. ব্যুৎপত্তি নির্দেশ, চ, এই অভিধানের বিন্যাস বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহার নির্দেশ, ছ. এই অভিধানে ব্যবহৃত সংক্ষেপ চিহ্নের তালিকা, জ. উচ্চারণ নির্দেশক চিহ্নের তালিকা, ইংরেজি-বাংলা অভিধান, ঝ. সংযোজন।

এ ছাড়া `APPENDICES’ শিরোনামে রয়েছে যে বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত রয়েছে সেগুলো হল : 1. Some Words Frequently Missplet by Students, 2. Some Irregular Verbs in Frequent Use, 3. Some Common Fornames with Their Pet and Short Forms, 4. Weight and Measures, 5. The Metric Prefixes, 6. The Chemical Elements, 7. Proof Reading, 8. A Comparative chart of Temperature Scales, 9. The Game of Cricket, 10. Roman Numerals

এই বইয়ের সবিশেষ উল্লেখযোগ্য অংশ হল এর উপক্রমণিকা অধ্যায়। এখানে প্রধান সম্পাদক ভাষা পরিবারের নানা দিক এমনভাবে হাজির করেছেন যার মধ্যে কেবল বিবিধ তথ্যই হাজির করা হয়নি, রয়েছে সুলুকসন্ধানী নানা ভাবনার খোরাক। যেখান থেকে শিক্ষার্থী ও আম পাঠকরা পাবেন এমনসব অজানা অনেক বিষয় যা বাংলাভাষার প্রতি আরও বেশি প্রীত হতে সহায়ক হবে। অন্যদিকে গবেষকরা পাবেন চিন্তা জাগানিয়া এমন তথ্য উপাত্ত, যা বড়ো ধরণের গবেষণার প্রবেশিকা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলা ভাষা নিয়ে নতুন করে ভাবনার বীজমন্ত্র রয়েছে নাতিদীর্ঘ এই আলোচনায়। প্রধান সম্পাদক এখানে কয়েকটি উপশিরোনাম ব্যবহার করেছেন। এগুলো হল : ইংরেজি ও বাংলার ঐতিহাসিক সম্পর্ক, Centum ও Satem বিভাগ, ইংরেজি ও বাংলা : ঐতিহাসিক আকস্মিকতার মিল, আর একটি ঐতিহাসিক লগ্ন, পাশ্চাত্য প্রভাবে সংস্কৃতচর্চার পুনরভ্যুত্থান, সংস্কৃত প্রভাবের গুণগত রূপান্তর।

বাংলা ভাষাভাষি শিক্ষিতজনদের সঙ্গে অভিধানের সম্পর্ক বা পরিচয়  উনবিংশ শতাব্দে ঘটে এবং সেই সময় থেকে এর বিবিধরূপের আনাগোণার ধারাবাহিকতা শুরু হলেও ঠিক উনবিংশ শতকেই যে এর শুরু ব্যাপারটা তেমন নয় মোটেই। বরং এই জনপদের অভিধানের ইতিহাস অনেক পুরনো। অমর সিংহ রচিত ‘অমরকোষ’, বা নামলিঙ্গানুশাসন অভিধানটি খ্রিস্টীয় ছয় শতকে রচিত। সংস্কৃত এই অভিধানটি সম্পর্কে স্বরোচিষ সরকার বাংলাপিডিয়ায় উল্লেখ করেছেন, ‘বিশেষভাবে লক্ষণীয় এই যে, এ অভিধানের শব্দভাণ্ডার এবং বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারের সিংহভাগ শব্দ অভিন্ন।’

বেদনার জায়গা হল, আমাদের অভিধানের ইতিহাস অনেক পুরনো হলেও অভিধান সংস্কৃতি সুখকর নয়। অভিধান পাঠের আগ্রহ সব স্তরেই আশাব্যাঞ্জক নয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অভিধান সংস্কৃতিকে বিকশিত করা ও প্রযত্ন দেয়ার চেষ্টা উল্লেখ করার মতো নয়। ভাষার মৌলিকতা হল এখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শব্দ যুক্ত হয়, শব্দের স্বরূপও পাল্টে যায়। মানসম্পন্ন অভিধানের বৈশিষ্ট্য হল সে নতুন শব্দরাজিকেও সংযোজন করে নেবে। বাধ্যতামূলক না হলেও প্রতি দশবছর পর জনসংখ্যা গণনা যেমন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে তেমনই পাঁচ বছর পরপর রাষ্ট্রিয়ভাবে অভিধান প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

বাংলা একাডেমির উল্লেখযোগ্য রকমের অভিধান থাকলেও তার প্রচার ও প্রচারণায় কোনো কার্যক্রম নেই। তাদের এমন অভিধানও রয়েছে যার নাম বিদ্বৎসমাজের অনেকেই জানে না, জানানোর ব্যবস্থাও করা হয় না। আমাদের শিক্ষাক্রমের সঙ্গেও অভিধানের সেই অর্থে কোন যোগসূত্র নেই। এ হেন অবস্থা দুঃখজনক। অথচ অভিধান হওয়া উচিৎ শিক্ষার পাটাতন বিশেষ। অভিধানের মধ্যেই সুপ্ত থাকে একটা জাতির আশা আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন, ইতিহাস, ঐতিহ্য, নৃতত্ব, সমাজবিজ্ঞানের সকল আধার। অভিধান সেসবের সঙ্গে পরিচয় ঘটায়, সম্পর্ক তৈরি করে।

অভিধান সংস্কৃতিই বলে দেয় ওই ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের জ্ঞানতৃষ্ণা কেমন। এই আমি কে, এই আমরা কে তা নির্ণীত হয় শব্দ দিয়ে। শব্দের অন্তর্গত অর্থই আমাদের পরিচয়। এই শব্দ ও তার অর্ন্তর্গত অর্থকে ধারণ করে অভিধান। এ কারণে অভিধান সংস্কৃতিকে হেলা করে জাতির উন্নয়ন যেমন নিশ্চিত করা যায় না তেমনি জাতির বৌদ্ধিক অবস্থার উৎকর্ষ ঘটানোও সম্ভব নয়।

ড. কাজল রশীদ শাহীন : সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও গবেষক।

আরও পড়ুন… ধলেশ্বরী মন